সমস্ত লেখাগুলি

প্যারিডোলিয়া (Pareidolia) -
অশোক কুমার সাও
Nov. 25, 2024 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:877 | likes:0 | share: 0 | comments:0

মেঘের মধ্যে গনেশ বা শিব কিংবা ক্রুশবিদ্ধ যিশু ইত্যাদির আদল অথবা ফল, সব্জি কিংবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক বস্তুর মধ্যে ধর্মীয় প্রতীক চিহ্ন, যেমন আরবি হরফে লেখা আল্লাহ (الله) দেখিয়ে সেগুলোকে অলৌকিকতার নিদর্শন হিসেবে দাবি করা পোষ্ট ফেসবুকে মাঝেমধ্যেই দেখা যায়। অথচ নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে যে কেউ বুঝতে পারবেন এর সঙ্গে অলৌকিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনি নিজেও কখনো না কখনো মেঘের মধ্যে বা নোনা ধরা দেওয়ালে মানুষের মুখ বা কোনো পশু পাখির আদল দেখে চমৎকৃত হয়েছেন।

 

এই পোষ্টের ফটোগুলোতে গাছের কাণ্ডের মধ্যে গনেশ, মেঘের মধ্যে গণেশ, শিবলিঙ্গ ও ক্রুশবিদ্ধ যিশুর আদল দেখানো হয়েছে। অন্য একটি ফটোতে কাটা পেয়ারার বীজের বিন্যাসে আরবি হরফে লেখা "আল্লাহ" (الله) দেখা যাচ্ছে। এগুলো নিতান্তই সাধারণ প্রাকৃতিক ঘটনা। এই ধরণের সাধারণ প্রাকৃতিক ঘটনার মধ্যে থেকে অর্থপূর্ণ কোনো ইঙ্গিত খুঁজে নেওয়ার এই প্রবণতার নামই হল প্যারিডোলিয়া (Pareidolia)।

 

Pareidolia শব্দটি তৈরি হয়েছে para (পরিবর্তিত) এবং eidolon (আকৃতি) এই দুই গ্রীক শব্দ নিয়ে। এই বৈশিষ্ট্যের সবচেয়ে সাধারণ প্রভাব হচ্ছে বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত নকশার মধ্যে মানুষের মুখাবয়ব খুঁজে পাওয়া।

 

এই প্যারিডোলিয়া মানুষের ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার  সহায়ক একটি বৈশিষ্ট্য যা বিবর্তনের ধারায় মানুষ অর্জন করেছে। এই বৈশিষ্ট্যের ফলে জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের মধ্যে অপর মানুষের মুখাবয়ব চিনে নেয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়। একটি মানব শিশু জন্মের দুই দিনের মধ্যেই মানুষের বিভিন্ন মুখভঙ্গি চিনতে ও সেগুলো অনুসরণ করতে শিখে যায়।এর ফলে সে কোনো মানুষের মুখের ভাব ও ভঙ্গী দেখে অনেক কিছু বুঝতে পারে। এই বুঝতে পারার ক্ষমতা সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে বসবাস করবার জন্য একটি জরুরি বৈশিষ্ট্য। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন মানুষের মুখের আকৃতির সঙ্গে মিল আছে এমন কোনো বস্তু মস্তিষ্কের কর্টেক্স অঞ্চলে দ্রুত উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে। এই কারণেই একটি বৃত্ত, দু’টি বিন্দু ও একটি আনুভূমিক দাগকে মানুষের মুখ হিসেবে কল্পনা করতে অসুবিধা হয় না।

 

পরবর্তী কালে জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথে নানা ধরনের আকৃতি সেই আকৃতি প্রসঙ্গে কিছু ধারণা আমাদের মস্তিষ্কে জমা হতে থাকে। এই আকৃতিগুলোর মধ্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বস্তু যেমন আছে তেমনি আছে নানা ধরণের অক্ষর, সংখ্যা ইত্যাদির প্রতীক চিহ্ন। যে ব্যক্তি যে ধরনের চিন্তা বেশি করে, সে সেই ধরনের প্যারিডোলিয়া বেশি দেখে। যে পশুপাখি ভালোবাসে, সে মেঘের মধ্যে হাতি দেখে। যে ধার্মিক, সে গাছের কাণ্ডের বা মূলের বিচিত্র আকৃতিতে গনেশের মূর্তি দেখে।

 

আরবী বর্ণগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে এবং আরবী ক্যালিগ্রাফী অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় বলে একই বর্ণ বিভিন্ন আকৃতিতে লেখা যায়। প্যারিডেলিয়ার কারনে কয়েকটি লাইন এবং লুপকে অনেক কিছু ভেবে নেওয়া সম্ভব। এই কারণেই ধার্মিক মানুষ অনেক সময় মেঘের মধ্যে বা কাটা পেয়ারার বীজের বিন্যাসে "আল্লাহ" (الله)  লেখা দেখতে পায়। একই কারণে দেবনাগরী "ওঁ"  লেখা দেখতে পাওয়াও প্যারিডেলিয়ার উদাহরণ।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86933